পাতায়ার দর্শনীয় স্থানঃ “পাতায়া” নামটার সাথে জড়িয়ে আছে বিনোদনের সকল আয়োজন। কি নেই এই শহরে? চাইলে সি বিচের ডেকচেয়ারে আয়েশ করে গাঁ এলিয়ে সমুদ্র দেখতে পারেন বা সৈকতের পাশে থাকা রেস্টুরেন্ট থেকে খেতে পারেন নানা ধরনের লোভনীয় খাবার। আবার ইচ্ছে হলে প্যারা গ্লাইডিং এর মতো রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার স্বাদ ও নিতে পারেন, আবার রৌদ্রজ্জ্বল দিনেসান বাথ করার মতো মজাও নিতে পারেন। পুরো শহরে ঘুরে দেখার মতো জায়গার অভাব নেই যদি আপনার সময় আর টাকার অভাব না থাকে। মূলত পাতায়া সি বিচ, শহরের প্রধান আকর্ষণ হলেও শহরের মাঝেও দেখার মতো অনেক জায়গা আছে। পাতায়া শহরে ঘুরে দেখার মতো জায়গাগুলো হল-
ভুটানিক্যাল গার্ডেনঃ ছোট থেকে বড় সবারই ভালো লাগবে এখানে গেলে। এই বাগান আসলে কয়েকটি বাগানের সম্মেলিত রূপ, এখানে আছে ১৭ শতকের ফরাসি বাগান, ইউরোপিয়ান রেনেসা বাগান এবং বিভিন্ন প্রজাতি হিসেবে আলাদা বাগান, অর্কিড ফুলের বাগান। এছাড়াও আছে লাইভ শো যেখানে তলোয়ার যুদ্ধ, ঐতিহ্যবাহী থাই নাচ ও থাই কিক বক্সিং উপভোগ করতে পারবেন।
জোমতিয়ান বিচ (Jomtien Beach)ঃ শহর থেকে ৪ কিলো দূরে অবস্থিতি এই বীচে আপনি সান বাথ করার সাথে সাথে জেট স্কিইং, কিইটস সার্ফিং, প্যারা সেলিং ও উইন্ড সার্ফিংকরার মতো রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা নিতে পারবেন।
কোরাল আইল্যান্ড(Koral Island) : পাতায়া বীচের মতো আরেকটা সুন্দর বীচ কোরাল আইল্যান্ড। এখানে মূলত কয়েকটি বীচ একসাথে তাই সকাল বেলা রওনা দিলে ওখানে পৌঁছে ভালো ভাবে দ্বীপটা দেখা দেখা যাবে। ওয়াকিং স্ট্রীট এর শেষ প্রান্ত থেকে কোরাল আইল্যান্ড এর ফেরি ছাড়ে, সময় লাগে ৪০ থেকে ৫০ মিনিট। আবার পাতায়া বীচ থেকে স্পীড বোটেও যাওয়া যায় এই আইল্যান্ডে।
Walking Street : পাতায়া শহরের বিনোদনের কেন্দ্রস্থল বলা যায় এই ওয়াকিং স্ট্রীট কে। দিনের বেলা নিরব থাকা walking street রাতে এক অন্য রূপ ধারন করে। বিনোদনের নানা উপকরণের সাথে সাথে এক অন্য রকম রঙ্গিন শহরের দেখা মিলবে এখানে।
কিভাবে যাবেন: থাইল্যান্ডের (Thailand) ব্যাংকক থেকে পাতায়ার দূরত্ব ১৫৮ কিলো। ব্যাংকক (Bangkok) থেকে পাতায়া যেতে পারেন থাইল্যান্ডের অভ্যন্তরীণ বিমান বা বাসে। বিমানে পাতায় যেতে সময় লাগে প্রায় ১.৫ঘন্টা আর বাসে গেলে প্রায় ৪ ঘণ্টা। বাসে যাবার ক্ষেত্রে , সুবর্ণভূমি বিমান বন্দরের লেভেল ১ এর ৮ নাম্বার গেটে পাতায়া যাওয়ার টিকেট পাওয়া যায়। ভাড়া বাংলাদেশী টাকায় ৩০০ টাকা আর থাইল্যান্ডের হিসেবে ১২০ বাথ। একটা বড় সুবিধা হল রাত ১০টা পর্যন্ত আপনি প্রতি ঘণ্টায় ঘণ্টায় বাস পাবেন। আবার গ্রুপ করে ঘুরতে গেলে গাড়ি ভাড়া করেও ব্যাংকক শহর থেকে পাতায়া যাওয়া যায়। সেই ক্ষেত্রে সময় লাগবে ২ ঘণ্টার মতো।
পাতায়া ভ্রমণ খরচ: ১-২ মাস আগে ঢাকা থেকে বিমানের টিকেট কাটলে রিটার্ন টিকেট সহ বিমান ভাড়া লাগবে ২৬০০০ থেকে ৩২০০০ টাকা। ৩/৪ জন মিলে হোটেলে থাকলে ১২০০-১৫০০ বাথের মধ্যে হোটেল পেয়ে যাবেন। প্যারা সেলিং ও স্নোরকেলিং এর ক্ষেত্রে আলাদা একটা খরচ আছে। এক্সাইটিং এই রাইডে জনপ্রতি খরচ ৫০০ বাথ আর স্নোরকেলিং এর ক্ষেত্রে খরচ জনপ্রতি ১২০০ বাথ। একক ভাবে ৪/৫ দিনের জন্য থাইল্যান্ডের পাতায়া শহর ঘুরে আসতে ৩৪০০০-৩৬০০০ টাকা খরচ হবে। আর ৪/৫ জনের গ্রুপ মিলে গেলে খরচ ২৮,০০০-৩০,০০০ টাকার মধ্যে হয়ে যাবে। তবে অবশ্যই ব্যাক্তিগত খরচ আলাদা।
হোটেল, রিসোর্ট ও খরচঃ পাতায়া তে থাকার জন্য বীচ এরিয়া ও ওয়াকিং স্ট্রীট এ বেশ কিছু হোটেল আছে। যেমন- গোল্ডেন সী পাতায় হোটেল, পাতায়া গার্ডেন হোটেল, জিং, জমটিএন মর্নিংস্টার গেস্ট রুম, পাতায়া ব্লু স্কাই হোটেল গুলোতে ১০০০- ১৫০০ টাকার মধ্যে দুই জনের থাকার জন্য রুম পেয়ে যাবেন। আর ৪/৫ জন মিলে পাতায়া ভ্রমণে গেলে ২৫০০-৩০০০ এর মধ্যে ভালো ৪ স্টার হোটেলে উঠতে পারেন, সেই ক্ষেত্রে খরচ বেশ কম হবে আর ৪ স্টার হোটেলের বাড়তি অনেক সুবিধাও পাওয়া যাবে। আবার কোরাল আইল্যান্ডেও থাকার জন্য বেশ কিছু হোটেল আছে।
কোথায় খাবেন ও কি খাবেনঃ থাইল্যান্ডের স্থানীয়দের খাবার মূলত চাইনিজ ও থাই। তবে আমরা বাংলাদেশে সাধারনত যে ধরনের চাইনিজ খাবার খেতে অভ্যস্ত সেই খাবার থেকে এই চাইনিজ খাবার বেশ আলাদা আর স্বাদেও অনেক পার্থক্য। তাই যারা অরিজিনাল চাইনিজ খাবার খেতে অভ্যস্ত তারাই শুধু এই খাবার খেতে পারবে। তবে ভিন্ন রকমের খাবারের স্বাদ পেতে অবশ্যই টেস্ট করে দেখতে পারেন। এছাড়াও আছে পিজা হাট, ম্যাকডোলাল্ড যেখানে অনায়েসে খেতে পারেন নানা ধরনের মজার চিকেন আইটেম। আর পাতায়া বিচের কাছে আছে বেশ কিছু রেস্তোরা। এখানে পাবেন নানা ধরনের সী ফুড যেমন। আর রাস্তার পাশে একদম নতুন অদ্ভুত কিছু খাবার পাবেন এখানে। নানা ধরনের পোকামাকড় ভাজা থেকে শুরু করে সাপও পাওয়া যায়, এগুলো স্থানীয়রা খেতে বেশ পছন্দ করে। আর যদি সব বাদ দিয়ে বাঙ্গালি খাবার খেতে চান তাহলে ওয়াকিং স্ট্রীট বা বীচ রোডের পাশে বেশ কিছু বাঙ্গালি রেস্তোরা আছে সেখানে যেতে হবে। এছাড়াও রাস্তার পাশে একটু পর পরই 7 Eleven ও Family Mart এর মতো সুপার শপ পাবেন, এখানে কম দামে ভালো খাবার পাবেন। এখানকার টম ইয়াম সুপ বেশ মজার।