রাণী ভবানী রাজবাড়ি (Rani Vobani Rajbari), নাটোরঃ আমাদের দেশের সমৃদ্ধ ঐতিহ্যের মধ্যে শত শত বছরের পুরোনো রাজবাড়িগুলো অন্যতম। এই রাজবাড়িগুলোর ঐশ্বর্য আমাদের বুঝিয়ে দেয় কতটা সমৃদ্ধ ছিল বাংলা, কত রাজার পা পড়েছে এই বাংলায়। এক কথায় এসব হচ্ছে ইতিহাসের জীবন্ত প্রমাণ। তেমনি একটি রাজবাড়ি হচ্ছে রানী ভবানী রাজবাড়ি (Rani Bhabani Rajbari)।
ঐতিহাসিকদের মতে, অষ্টাদশ শতকের শুরুতে নাটোর রাজবংশের উৎপত্তি হয়। ১৭০৬-১৭১০ সালের মধ্যে নাটোর রাজবাড়িটি নির্মিত হয়েছিল। ১৭০৬ সালে পরগণা বানগাছির বিখ্যাত জমিদার গণেশরাম রায় ও ভবানী চরণ চৌধুরী রাজস্ব প্রদানে ব্যর্থ হয়ে চাকরিচ্যুত হন। এরপর দেওয়ান রঘুনন্দন জমিদারির দায়িত্ব দেন তার ভাই রাম জীবনকে। আর এভাবেই সূচনা হয় নাটোর রাজবংশের। ১৭০৬ সালে রাজা রাম জীবন নাটোর রাজবংশের প্রথম রাজা হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। রাজা রাম জীবনের মৃত্যুর পর তার দত্তক পুত্র রামকান্ত রাজবংশের রাজা হন। ১৭৩০ সালে রাণী ভবানীর সাথে রামকান্তের বিয়ে হয়। ১৭৪৮ সালে রাজা রামকান্তের মৃত্যুর পর নবাব আলীবর্দী খাঁ রাণী ভবানীর উপর জমিদারি পরিচালনার দায়িত্ব অর্পণ করেন। রাণী ভবানীর রাজত্বকালে তার জমিদারি বর্তমান রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, কুষ্টিয়া, যশোর, রংপুর, পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ, বীরভূম, মালদহ জেলা পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। ১৮০২ সালে রাণী ভবানীর মৃত্যুর পর তার দত্তক পুত্র রামকৃষ্ণ জমিদারির দ্বয়িত্বগ্রহণ করেন।
রানী ভবানী রাজবাড়ী বড় তোরফ ও ছোট তোরফ নামক দুটি অংশে বিভক্ত। ১২০ একর আয়তনের রানী ভবানী রাজবাড়ী কমপ্লেক্সে ছোট বড় মোট ৮ টি ভবন রয়েছে। কিছুটা মতভেদ থাকলেও নিশ্চিত ভাবে বলা যায় ১৭০৬ থেকে ১৭১০ সালের মধ্যে নাটোরের রানী ভবানী রাজবাড়ি নির্মাণ করা হয়েছিল। তৎকালীন পুঠিয়ার রাজা দর্পনারায়ণের কাছ থেকে ১৮০ বিঘা আয়তনের একটি বিল রাজা রাম জীবন দান হিসাবে গ্রহন করে এই রাজবাড়ী ও অন্যান্য স্থাপনা গড়ে তোলেন। রাজবাড়ির উল্লেখযোগ্য মন্দিরগুলো হল শ্যামসুন্দর মন্দির, আনন্দময়ী কালিবাড়ি মন্দির, তারকেশ্বর শিব মন্দির। বড় তরফ অংশের মূল কমপ্লেক্সটিই রানী ভবানীর রাজ প্রসাদ হিসাবে ব্যবহৃত হত। ১৯৮৬ সাল থেকে রাজবাড়ির পুরো এলাকাটি রাণী ভবানী কেন্দ্রীয় উদ্যান বা যুব পার্ক হিসেবে নাটোর জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
কিভাবে যাবেনঃ ঢাকা থেকে সড়ক ও রেলপথে নাটোর যাওয়া যায়। আর নাটোর শহর থেকে রিক্সা বা টেম্পু ভাড়া করে সরাসরি রাণী ভবানী রাজবাড়ী ভ্রমণ করতে পারবেন।
কোথায় থাকবেনঃ নাটোরে মুটামুটি মানের কতগুলো আবাসিক হোটেল ও বোডিং রয়েছে। হোটেল ভি.আই.পি এবং হোটেল রুখসানায় সিংগেল কেবিন ২৫০ থেকে ৩০০ ও ডাবল কেবিন ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা ভাড়ায় রাত্রি যাপন করতে পারবেন। তাছাড়াও ঢাকা নতুন বাস স্ট্যান্ড রোডে অনেক ছোট-বড় আবাসিক হোটেল রয়েছে।
কোথায় খাবেনঃ উদরপূর্তির জন্য নাটোরে বেশকিছু বিভিন্ন মানের রেস্টুরেন্ট রয়েছে। তন্মধ্যে-পচা ইসলামীয়া হোটেল নাটোরের ঢাকা নতুন বাস স্ট্যান্ড পথের অনেক জনপ্রিয় ও খাবারের মান ও দাম অনেকটাই ভালো। নিজের পছন্দ মত যেকোন রেস্টুরেন্টে সকাল, দুপুর ও রাতের খাবার খেতে পারবেন। সমগ্র বাংলাদেশে চলনবিল এবং রানী ভবানী সুস্বাদু মাছের সুনাম ছড়িয়ে আছে। তাই নাটোর ভ্রমনকালে মাছ খাওয়ার এই সুযোগ মিস করা মোটেও ঠিক হবে না। সাথে নাটোরের বিখ্যাত কাঁচাগোল্লা খেয়ে সাথে করে নিয়েও আসতে পারেন।